ফিরে এল ফুরার : পর্ব ১


(নব্য নাৎসীদের নেতা আলফ্রেড স্ট্রেচারের ভারতের আস্তানা। অনেক নাৎসী একত্রিত হয়েছে। হিটলারকে পুনঃর্জীবিত করার জন্য অনুষ্ঠান চলছে। এক তান্ত্রিক মন্ত্র পড়ছে মঞ্চে বসে। ঘরে থমথমে পরিবেশ। মন্ত্র পড়া চলতে থাকবে।)
তান্ত্রিক :       ওং ভ্রং চং
                  ওং ভ্রং চং
 (একজন নাৎসী সেনা জেনারেলের দিকে এগিয়ে যাবে)
সেনা ১ :      স্যার, স্যার?
স্ট্রেচার :      (মন্ত্র শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে) ঘ্র.......ঘ্র.......
সেনা ১ :      ও স্যার?
স্ট্রেচার :      (জেগে উঠে).....অ্যা! জয় হিটলার!
তান্ত্রিক :       হিটলারের দেহ সম্পূর্ণ হয়েছে বিনষ্ট। দেহ প্রতিস্থাপন করার জন্য সম্পূর্ণ নিষ্পাপ একজন মানুষের অর্ডার 
                  দিয়েছিলাম। তাকে কি আনা হয়েছে?
সেনা ২ :      আমরা ebayতে অর্ডার দিয়েছিলাম। সেখানে নিষ্পাপ মানুষ নাই।
সেনা ৩ :      আমরা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর মানুষ মনে করেছে বিয়ে দেওয়ার জন্য নিষ্পাপ বর চাওয়া হচ্ছে, তাই সবাই বিয়ে করার জন্য হাজির হয়েছে। অনেক কষ্টে ঝামেলা সামাল দেয়া গেছে।
সেনা ৪ :      এরপর আমরা ফেসবুকে খোঁজ করলাম। Princess Tuktuki নামের এক ফেক আই.ডি. থেকে নিষ্পাপ মানুষের নাম চেয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। সেখানে এক ব্রিটিশের নাম সবচেয়ে বেশিবার উঠেছে, তাকে ধরে আনা হয়েছে।
তান্ত্রিক :       নিয়ে আস তাকে, তাড়াতাড়ি।
(সৈনিকরা ধরাধরি করে এক লোককে নিয়ে প্রবেশ করবে।)
স্ট্রেচার :      অই ব্যাটা, তোর নাম কি?
বৃটিশ :        (অনেককষ্টে দম নিয়ে)....বি....ন।
স্ট্রেচার :      এহ, বিন! মুখখানা দেখ একবার, কেমন ব্যাঙের মত। ইয়াক থু..........এই, একে নিয়ে গিয়ে মন্ডপে বসাও।
সেনা ২ :      কিন্তু স্যার, এই বৃটিশ মালটার চেহারা তো একেবারে বেকুবের মত, ফুরার যদি রাগ করেন?[নাৎসীরা হিটলারকে ফুরার নামে ডাকত]
সেনা ৪ :      কিন্তু এর চেয়ে নিষ্পাপ লোক আর কোথায় পাব মিয়া? খালি ঝামেলা লাগাও।
স্ট্রেচার :      ইস্,চুপ কর তোমরা! তান্ত্রিক বাবা, শুরু করেন।
(মন্ত্র পড়া হতে থাকবে। একপাশে নাৎসী মেয়েরা চিয়ারলিডিং করতে থাকবে। ঠিক এ সময় “সিসে সে সিসে টাকরায়ে....ও....ও....ও” গান করতে করতে এক মাতালের প্রবেশ।)
স্ট্রেচার :      অই শালা মাতালের বাচ্চা! সর, সর!
মাতাল :       পারু? পারু আছে?..........(বিনকে দেখে পারুমনে করে) ও পারু, আমি
                  আসছি।
সেনা ১ :      এই পাগলাটা আবার কে রে ভাই?
মাতাল :       আমাকে চিনিস না ব্যাটা? আমি দেবদাস চক্রবর্তী। শরৎবাবুর উপন্যাস সমগ্র পড়ে দেখিস। নীলক্ষেতে কম দামে পাওয়া যায়। নাহলে সিনেমাগুলো দেখে নিস, ওতেও চলবে।

তান্ত্রিক :       আহা,পাগলাটাকে কেউ সরারে বাপ। এত রাত হয়ে যাচ্ছে, আজকে আবার মা সিরিয়ালের স্পেশাল পর্ব, বাসায় গিয়ে দেখতে হবে।
(তীব্র আলোর ঝলকানিতে সমস্ত আস্তানা আলোকিত হয়ে যাবে। বজ্রপাতের শব্দ। নেপথ্যে দামামা বাজবে। এসময় হিটলারের হাসির শব্দশুনা যাবে। চারদিকে প্রবল ধূয়া, এর মধ্য থেকে হিটলারের আত্মা বের হয়ে বিনের ভেতরে প্রবেশ করতে যাবে। দেবদাস পারু মনে করে বিনকে জড়িয়ে ধরবে। হিটলার ভূলে দেবদাসের দেহে প্রবেশ করবে।)
দেবদাস :     আই অ্যাম ব্যা........খক খক খক (কাশি)।
সেনাগন :     (গান ধরবে)
ও ফুরার, ও ফুরার!
জয় হোক তোমার!
    
লাগায়ে তোমার মুচ,
মেঘবরণ কুচকুচ;
ঝুলিছে নাকের নিচে
লোমশ শ্যামল বিছে।

পদতলে ঠাই পাবে দুনিয়া!
আমরা গোলাম তব
রাখ সবে চিনিয়া।

হিটলার :      (দেবদাসের দেহ থেকে) হা হা হা....হিটলার খুশ হোয়া......খক খক খক!
তান্ত্রিক :       হায়রে হায়! কি হয়ে গেল? হিটলার এই মাতালটার দেহে ঢুকে গেছে। অনর্থ! ঘোর অনর্থ!
সেনাগন :     জয় ফুরারের জয়!
হিটলার :      শান্ত,শান্ত.....খক খক খক।
স্ট্রেচার :      ফুরার,আপনি ঠিক আছেন? শরীর স্বাস্থ্য ভালো তো?
হিটলার :‌‌      তোর ঠিকের খেতা পুড়ি স্ট্রেচারের বাচ্চা! এ কোন আপদের মইধ্যে আমারে ঢুকালি গর্দভের দল। দুনিয়া দখল করব কি, কাশতে কাশতেই আমার আজকে যমলোক প্রাপ্তি হয়ে যাবে......খক খক খক।
স্টেচার :‌      স্যার,আমরা আপনাকে এই ব্যাটার মাঝে ঢুকাতে চাইনি। আমরা তো ধরে এনেছিলাম এই বৃটিশটাকে, কিন্তু পাগলা মাতালটা না জানি কোন নরক থেকে হাজির হয়ে গেল......
হিটলার :      এহ,হাজির হয়ে গেল! (এক সেনার দিকে আঙ্গুল তুলে) এই, একটু মদ-টদ কিছু আন না রে ভাই,গলা....খক.....খক....শুকিয়ে কাঠ। মাতালটার পিপাসা তো ডেঞ্জারাস রকমের খারাপ।
সেনা ২ :      ফুরার,কি মদ আনব বলুন। বিয়ার, হুইস্কি, স্কচ?
হিটলার :      এই শালা কি নেশা লাগাইল রে.......ওই সবে কাজ হবে না। বাংলা মদ যোগাড় কর........খক খক খক।
সেনা ৪ :      আজ্ঞে ফুরার।
(তান্ত্রিক গিয়ে হিটলারের মুখের গন্ধ শুঁকবে এবং পেটে লাঠি দিয়ে গুতো দেবে।)
তান্ত্রিক :       দেহের লিভার ক্ষতিগ্রস্থ। চলবে না, এই শরীরে চলবে না।
হিটলার :      এই বুড়ো কে আবার?
তান্ত্রিক :       (রেগে গিয়ে) কি বেদ্দপ, আমাকে বুড়ো বলিস! বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ!......আমি মহাতান্ত্রিক মহাপরাক্রমি মহাজ্ঞাণী মহাব্রাহ্মণ ত্বরা ভৈরব, সবাই ডাকে ত্যারা ভৈরব।
হিটলার :      (থতমত খেয়ে) দাদা, বুঝতে পারলাম, তুমিও আর্য্য, আমিও আর্য্য। আমরা ঝগড়া না করি......খক খক খক।
স্টেচার :      বাবা,ফুরারের এই সমস্যার কোন সমাধান নাই?
ত্যাড়া :        হুমম,একটা উপায় থাকতে পারে।
স্ট্রেচার :      কি উপায় বলুন বাবা, বলুন! দরকার হলে আমি রাশিয়া-আমেরিকা-ব্রিটেন-ফ্রান্স সব এক করে দিব।
ত্যাড়া :        এত ভাব দেখাইয়ো না গবেট..........(পাঞ্জেরী মহাউচ্চমাধ্যমিক জাদুবিদ্যা গাইড খুলে) একটা কয়েন যোগাড় করতে হবে।
স্ট্রেচার :      কয়েন?
ত্যাড়া :        হ্যা হ্যা, কয়েন। অভিশপ্ত অ্যাজটেক মুদ্রা!
হিটলার :      বাপরে বাপ! আমি ওই কয়েন দিয়ে কি করব? এই নাদান ধাতব মুদ্রাগুলোকে অভিশাপই দিল কে?সেন্টার ফ্রুট কিনতে পারতো.....ছেঃ ছেঃ ছেঃ।
(ত্যাড়া ভৈরব জোরে শ্বাস নিবে। সবাই আগ্রহ ভরে সামনে এগিয়ে আসবে। বিন তার অ্যান্ডয়েড ফোনে টুইটার চালাতে গিয়ে ভূল করে ভয়েস রেকর্ডার অন করে দেবে।)
ত্যাড়া :        (ভারতনট্যম নাচতে নাচতে)
                সে কাহিনী নয় ছোট, জেনো-
                মনযোগ দিয়ে আমার কথা শুনো।
সেনাগন :     শুন.......শুন........শুন........(অপেরার সুরে)।
হিটলার :      খক.......খক........খক.......।
স্ট্রেচার :      তুমি পণ্ডিত বটে, হবে বাবা মানতে
                কেমনে মিলবে মুদ্রা চাই সবে জানতে।
সেনাগন :     চাইসবে জানতে, চাই সবে জানতে।
ত্যাড়া :        

সভ্যতা সন্তর্পণে ছাড়িয়ে
মহাদেশ মহাসাগর পেরিয়ে।
কৈলাস গন্ধমাধন উচ্চতায় তুচ্ছ
জল হেথা বায়ু তুল্য স্বচ্ছ।
ভয়াল দ্বীপ সেথা কঠিন পৌছা বটে
না যদি নিশান লিখা থাকে ঘটে।
ছিনিয়ে অ্যাজটেক মুদ্রা হিরণ্যক
অভিশপ্ত হবে ফুরার, কথা সত্য, ধ্রুবক।
হিটলার :      ঘ্র.........ঘ্র.........ঘ্র......(নাক ডাকার আওয়াজ)।
ত্যাড়া :        মূর্খ হিটলার! ঘুমাচ্ছিস!......আমি  তোকে অভিশাপ দিচ্ছি...
স্ট্রেচার :      গোস্তাখি মাফ......বাবা গোস্তাখি মাফ.....
ত্যাড়া :        হুমম। বটে........লেটস স্টার্ট এগেইন বেইবি।
হিটলার :      (জেগে উঠে) না না দাদা.......তোমার ওই সুরেলা কন্ঠকে তকলিফ দিতে চাই না (মুখ বিকৃতকরবে)।
বিন :          (অন্যদেরদেখে উৎসাহিত হয়েছে)
                ওয়ান্না বি মাই ছাম্মাক ছাল্লো
                ও.....ও......ও
হিটলার :      অই ব্রিটিশ বেকুব, অফ যা। গন্ডারের মত গলা আর গাচ্ছে গান.......খক......খক......খক.....হ্যা, যা বলছিলাম। কি বলছিলে যেন ত্যাড়াদা?
ত্যাড়া :        তোরা যদি অ্যাজটেক কয়েন চুরি করতে পারিস তবে তোদের উপর লাগবে এক ঐতিহাসিক অভিশাপ। সেই  অভিশাপের জন্য তোরা না মরবি, না তোদের পিপাসা থাকবে, না থাকবে ক্ষুধা, খালি চান্দের আলোতে চেহারাটা কিঞ্চিৎ........ব্যাপার না! হ্যা, যা বলছিলাম। অভিশাপ হয়ে যাবে তোদের জন্য শাপে-বর। না বুঝলে পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান এর প্রথম পর্বটা দেখে নিস স্টার মুভিজে।
সেনাগন :     হা.........হা........হা.........হা........হা........
চিয়ারলিডার : হি.........হি........হি.........হি........হি........
স্টেচার :      হো........হো.......হো........হো........হো......
(হিটলার হাসি শুরু করতেই শুনা যাবে বাচ্চাদের হাসি। সবাই অবাক হয়ে হিটলারের দিকে তাকিয়ে দেখবে বাচ্চাদের হাসি হিটলার হাসছে কি না। তারপর আবিষ্কার করবে বিন তার অ্যান্ড্রয়েডে বাচ্চাদের হাসির রিংটোন বাজাচ্ছে।)
হিটলার :      আ আ আ আ আ..........এই ইডিয়টটারে গুলি মার।
ত্যাড়া :        আহ,ছাড়ো ছাড়ো। বাজে প্যাচাল বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসি......যা বলছিলাম। অভিশপ্ত অ্যাজটেক মুদ্রা কোন একটা দ্বীপে রাখা আছে, কিন্তু কেউ জানে না সে দ্বীপ কোথায়। আর যে জানে সে ছাড়া আর কেউ কখনও ওই দ্বীপে যেতে পারে না। যে জানে সে কোথায় তাও কেউ জানে না। জানে এমন কেউ আছে কি না তাও কেউ জানে না।
হিটলার :      বুঝলাম বুঝলাম.........তুমি জান কি, দাদা?
ত্যাড়া :        যতটুকু জানতাম একদল জলদস্যু জানত। তারা অন্য কয়েকজনকে জানিয়েছিল পরে এই রহস্য, তারাও জানত। যারা জানত তারা আরও পরে কাউকে জানিয়েছে কি না তা জানিনা।
(হিটলার বিভ্রান্ত হয়ে কান চুলকোবে)।
স্টেচার :      কিন্তু যারা জানে তারা কোথায় জানেন বাবা?
ত্যাড়া :        (চিন্তা করে) জলদস্যু......ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ....ওয়েস্ট ইন্ডিজ!
স্ট্রেচার :      ওয়েস্ট ইন্ডিজ? T-20 খেলার ইচ্ছে হইলো নাকি আপনার। ক্রিস গেইলরে ধরে আনতে হবে?
ত্যাড়া :        চুপ মূর্খ! আমাদের ভারত ছেড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জেতে হবে এবার। সেখানে জলদস্যুদের খোঁজ পেলেই....হাহ হাহ হাহ!
সেনাগন :     হা.........হা........হা.........হা........হা........
চিয়ারলিডার : হি.........হি........হি.........হি........হি........
স্টেচার :      হো........হো.......হো........হো........হো......
হিটলার :      হ.........খক.......খক.......খক.......খক......
(এই ফাঁকে বিন সুযোগ বুঝে কেটে পড়বে।)

সতীর্থ লেখক : মোঃ ফারহাদুল হক লিয়ন
পরবর্তী পর্ব আদৌ প্রকাশিত হবে কি না শিওর না, তবে আশা ছাড়তে হইবেক না।

মৃন্ময়

নিজের বিষয়ে কথা বলতে আমার অস্বস্তি লাগে। তাই আমি নিজের বিষয়ে কিছু বলব না।