যে আলাপ মহাকাশেও হবার নয়


সূর্য: আরে ব্ল্যাকহোল ভাই নাকি?
ব্ল্যাকহোল: অ, তুই?
সূর্য: হ ভাই। ভালো আছেন? অবশ্য জিজ্ঞাস কী করমু, আপনারে তো দেখাই যায় না।
ব্ল্যাকহোল: অই ব্যাটা, ফাইজলামি করস? আমারে চিনস? আমি জুনায়েদ.....
সূর্য: আপনি জুনায়েদ?
ব্ল্যাকহোল: ও স্যরি.......আমি ব্ল্যাকহোল। মিয়া ব্ল্যাকহোল হওয়ার যোগ্যতা আছে তোমার বড় বড় কথা কও যে? হইবা তো একটা শ্বেত বামন।
সূর্য: আরে ভাই রাগ করেন কেন? এমনেই মজা করলাম। এতদিন পর আপনার সাথে দেখা, আসেন কোলাকুলি করি।
ব্ল্যাকহোল: না না কাছে আসিস না। স্বভাব খারাপ হইয়া যাইতাছে, যারে পাই তারেই টান মারতে ইচ্ছা হয়।
সূর্য: আচ্ছা ভাই কাছে আসমু না, সমস্যা নাই।
ব্ল্যাকহোল: তা তোর পুলাপান ভালো আছে?
সূর্য: ভাই আর কইয়েন না। বুধ তো বেশ শান্তশিষ্ট, আমার কাছে কাছেই থাকে। কিন্তু বড়গুলা ভাই দূরেই থাকে সারাবছর। পৃথিবী বদমাইশটার কথা ধরেন, কী করে কী খায় কোন ঠিকঠিকানা নাই। সারা শরীরে নাকি উকুন। ওইদিন শুনলাম চাঁদ নামের এক মাইয়া নাকি ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করে সারাদিন।
ব্ল্যাকহোল: ভাবসাব তো ভালো ঠেকে না।
সূর্য: তেইলে আর কই কী? ভাই জীবনটা ত্যানাত্যানা হইয়া যাইতাছে একেবারে। এতদিন জাইনা আইছি প্লুটো আমার পুলা। ওমা, ওইদিন শুনি এইটা নাকি ভূল কথা।
ব্ল্যাকহোল: হ, খারাপ তো লাগারই কথা..........আরে হুজুর না এইটা?
মিল্কিওয়ে: আরে আমার বাচ্চারা, তোমাদের স্বাস্থ্য ভালো তো?
সূর্য: জ্বি হুজুর, সবই আপনার দয়া।
মিল্কিওয়ে: না না কী যে বল। তা তোমরা কি কেউ ফোটনগুলোকে দেখেছ?
ব্ল্যাকহোল: ফোটন তো হুজুর অনেকই দেখি। আপনি কারে খুঁজেন?
মিল্কিওয়ে: অ্যান্ড্রোমিডার থেকে খবর নিয়ে আসার কথা ছিল। বেচারারা মাঝখানে কোথায় গায়েব হয়ে গেল, নাকি এখনও এসে পৌছুয়নি বুঝতে পারছিনা।
ব্ল্যাকহোল: হুজুর চিন্তা করবেন না। অ্যান্ড্রোমিডার সাথে আপনার যোগাযোগ আছে এখনও?
মিল্কিওয়ে: ওরে বাবা, থাকবে না? এই দেখ, মহাবিশ্বে সবাই দূরে দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু অ্যান্ড্রোমিডা আমার কাছেই আসছে। আমাদের সম্পর্কটা আসলে একটু আলাদা।
সূর্য: হে হে হে, তা হুজুর ঠিকই কইছেন।

[অজানা ব্যক্তির প্রবেশ]
অজানা ব্যক্তি: এই যে, শুনুন। আমি কোথায় আছি বলতে পারেন?
মিল্কিওয়ে: আপনি কে জনাব?
অজানা ব্যক্তি: আমি ফার্মির প্যারাডক্স।
সূর্য: আপনি কী চান ভাই?
ফার্মির প্যারাডক্স: আমি কিছু চাই না। সমস্যা হচ্ছে যে আমি একটু বিভ্রান্ত। মহাবিশ্বে অসংখ্য প্রাণ থাকার খুব সুন্দর প্রোবাবিলিটি থাকার পরও পৃথিবীর মানুষ কেন তাদের খুঁজে পাচ্ছে না এটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না।
ব্ল্যাকহোল: তা আপনি সমস্যার সমাধান করেন না, আমাদের কথায় ডিস্টার্ব দেন কোন কারনে মিয়া?
মিল্কিওয়ে: আহা ব্ল্যাকহোল, ওভাবে বলতে হয় না।
ফার্মির প্যারাডক্স: সবকিছু ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে....ড্রেকের সমীকরণ কী বলে যেন, ভূলে যাচ্ছি, মনে পড়ছে, ভূলে যাচ্ছি.......আচ্ছা আমি আসি, আমি আসি।
[ফার্মির প্যারাডক্সের প্রস্থান] 

সূর্য: কোথা কোথা থেকে যে চলে আসে এরা।
ব্ল্যাকহোল: হ.......ওই যে দেখ, আরেকজন কে যেন আসছে।
অজানা ব্যক্তি ২: বাহ, এখানে সবাইকে পেয়ে গেছি, ভাবা যায়? মহাবিশ্বটাই গোল।
সূর্য: তুমি কে ছোটবাবু? দেখতে ছোটখাট কিন্তু লম্বা তো কম হও নাই।
অজানা ব্যক্তি ২: আমি দেখতে শুনতে ছোট বলে অবজ্ঞা করবেন না। আমি আছি, ছিলাম, থাকবো। আমি মহাবিশ্বের কোণায় কোণায় যেখানে সেখানে আছি। খুঁজলেই আমাকে পাবেন।
ব্ল্যাকহোল: কে গো মিয়া আপনি, অ্যা?
অজানা ব্যক্তি ২: আমি? আমি ৩.১৪১৫৯২৬৫...........অনেক বড় আমার পরিচয়।
মিল্কিওয়ে: ও! আপনিই সেই ব্যক্তি? যাকে কেউ কেউ পাই বলে ডাকে? সম্মানিত বোধ করছি আপনার সাথে পরিচিত হয়ে।
পাই: ধন্যবাদ। তা আপনারা সবাই কী করেন?
মিল্কিওয়ে: তেমন কিছু তো করছি না। এমনেই গল্প করছি। আপনি?
পাই: আমি? আমি তো সবজায়গাতেই আছি। যেখানে বৃত্ত, যেখানেই কোন কিছু গোল সেখানেই আমি থাকবো।
ব্ল্যাকহোল: তো পাই ভাই, আপনি এত লম্বা হইলেন কেমন কইরা? ছোটবেলায় কমপ্ল্যান খাইছিলেন?
পাই: আমার তো আপনাদের মত ছোটবেলা নেই, আমি ধ্রুবক। অমূলদ তো, তাই দশমিকের পর বাড়ছি তো বাড়ছিই, থামার নাম নেই। কিছুদিন আগেই এক পলিটিশিয়ান আমাকে মূলদ বানিয়ে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। আমার একান্ত ভক্তরা পৃথিবীতে আছে, ওরা হতে দেয়নি।
সূর্য: যাক, আমার পুলাটা তা হইলে কোন কাজে টাজে লাগে।
পাই: কেন লাগবে না? পৃথিবী নিয়ে আপনি গর্ব করতে পারেন।
মিল্কিওয়ে: আচ্ছা যাকগে, অ্যান্ড্রোমিডার খবর এলো বলে। এখন আমাকে যেতে হয় যে। বিদায় বাচ্চারা, বিদায় পাই।
সূর্য: আচ্ছা হুজুর।
ব্ল্যাকহোল: বিদায় হুজুর।
পাই: যাই তবে। কখনও গোল কিছু পেলে আমাকে জানাবেন, আমি আশেপাশেই থাকবো।


সূর্য, ব্ল্যাকহোল, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, ফার্মির প্যারাডক্স আর পাই সবাই চলে গেল। এই কথোপকথনের এখানেই সমাপ্তি। সত্যি সত্যি এদের কখনো এক হয়ে কথা বলার সম্ভাবনা নেই। আমরা কেবল মজা করতে পারি। পৃথিবীর অসংখ্য উকুনের নির্বুদ্ধিতা এবং অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য মজার বিকল্প নেই।

মৃন্ময়

নিজের বিষয়ে কথা বলতে আমার অস্বস্তি লাগে। তাই আমি নিজের বিষয়ে কিছু বলব না।