ষোলর আই.এম.ও. এবং এক পা দূরত্ব

জুলাই ১৫, ২০১৬ , 0 Comments



এই লেখাটা কেমন করে শুরু করবো সেটা বুঝে পাচ্ছিলাম না। প্রথমে মনে হলো একটা নোটিশ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যাক। কিন্তু যা নিয়ে, কিংবা যাদের নিয়ে লেখছি তাদের কথাগুলো এতটা ছোট হওয়া উচিৎ নয়। এরপর ভাবলাম সম্পাদকীয় স্টাইলের একটা কিছু লেখা যেতে পারে। কিন্তু দুই লাইন টাইপ করেই কেটে ফেলতে হলো, কঠিন কঠিন শব্দ মাথাতেই আসছে না। একটা বিশ্লেষণী প্রবন্ধগোছের কিছু লেখা যেতে পারতো, কিন্তু বিশ্লেষণ করবো কাকে তাই তো বুঝতে পারছি না।

সুকুমার রায় হতে পারলে ভালো হত। তিনি নিশ্চয়ই এটা নিয়ে আবোল-তাবোল টাইপ উদ্ভট কোন ছড়া লিখে ফেলতে পারতেন। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য নেই। 

গত দশবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য কোথায়? আমার ধারনা অনেকে বলবে ক্রিকেট, কেউ কেউ বলতে পারে তথ্য-প্রযুক্তি, আর কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না। তবে আমার মতামত একেবারেই আলাদা। গত দশবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য গণিতে। কেমন করে সেই ইতিহাস অনেকবার বলা হয়েছে, আমি নতুন করে বলতে চাই না।

বাংলাদেশ খুব বেশিদিন হয়নি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যাচ্ছে। কিন্তু এর মাঝেই কিন্তু আমরা বেশ তুখোর হয়ে গেছি। ২০১৬ আই.এম.ও. হয়েছে হংকং এ। এবারে আমরা যে ছয়জন গণিতবিদকে পাঠিয়েছিলাম তারা হচ্ছে অাসিফ ই এলাহী, আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী, সাব্বির রহমান, সাজিদ আকতার, নাঈমুল ইসলাম ও সানজিদ আনোয়ার। আমি ওদের একজনকেও ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, এখন এই কারনে আফসোস হচ্ছে। আমরা কোন কারনে খুশি হলেই খাওয়ানোর ধূম পড়ে যায়। ওদের চিনলে বলতে পারতাম, “বল কী খেতে চাও?”

প্রতিবছর আই.এম.ও. তে পদক দেওয়ার জন্য নির্ধারিত পয়েন্ট সমান থাকে না। এ বছরও উলট পালট হয়েছে। যদি নির্ধারিত পয়েন্টগুলো আর একটু কম হতো তাহলে আমরা এবার একটা সোনা, একটা রূপা, তিনটে ব্রোঞ্জ এবং একখানা অনারেবল মেনশন পেয়ে যেতাম। তা হয়নি, আমরা পেয়েছি একটা রূপা, তিনটে ব্রোঞ্জ এবং দুইটা অনারেবল মেনশন। এটাই বা কম কী? সারা পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান ৩৫ নম্বরে। আগের বছরও সম্ভবত এমনই কিছু একটা ছিলো। আমাদের আসিফের ব্যক্তিগত অবস্থান ৪৫, গর্ব করার মতই।

ওদের ছয়জনকে অসংখ্য অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ। আমাদের চারপাশে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা দেখে মাঝে মাঝে আশা হারিয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু ওদের মত কয়েকজনকে যখন আমরা দেখি তখন সেই আশাটা কয়েকশ গুণ হয়ে ফিরে আসে। 
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের সামনে অনেক বাধাবিপত্তি আছে সেটা আমরা জানি। আমাদের পড়াশুনার সিস্টেমটা মোটেও সুবিধের নয় সেটাও সবাই স্বীকার করেন। কিন্তু এত চিন্তার কিছু নেই, আমাদের আরও অনেক কিছু এখনও করার বাকি এবং আমরা সেটা করে দেখাবো। করে যে দেখাবো তার প্রমাণ তো পেয়েই চলেছি প্রতিবছর!

মৃন্ময়

নিজের বিষয়ে কথা বলতে আমার অস্বস্তি লাগে। তাই আমি নিজের বিষয়ে কিছু বলব না।