কল্পনা



স্কুলের মাঠটা বেশি বড় নয়। টিফিন পিরিয়ডের সময় যখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হাজার রকমের খেলা খেলতে থাকে, কেউ একপাশে দাড়িয়ে গল্প করে, তখন মাঠটাকে আরও ছোট মনে হয়। কিন্তু গতকাল রাতে ভয়ানক ঝড় হয়েছে, আজ সকালেও অঝোড়ে বৃষ্টি পড়েছে। এখনও টিপ টিপ পানির ফোটা পড়ছে আকাশ থেকে। এ কারনেই স্কুলে ছাত্র আজকে বেশি নেই, মাঠে কেবল দস্যি কয়েকটা বাচ্চা ছুয়াছুয়ি খেলছিল। পিচ্ছিল ঘাসে দৌড়াদৌড়ি করা মোটেও সহজ কাজ নয়, দুই তিনজনতো এর মাঝেই পড়ে গিয়ে জামায় কাদা লাগিয়েছে। তাও এদের থামার নাম নেই, সবাই মনে হয় বেশ আনন্দে আছে। ঠিক তখন একজনের চোখে পড়ল মাঠে পড়ে থাকা জিনিসটা।
অদ্ভুত দেখতে একটা পুতুল। চারটে হাত, রঙটাও আবার লাল! এত সুন্দর পুতুল এর আগে কেউ কোথাও দেখেনি, একেবার জীবন্ত
বলে মনে হয়। একপাশ খুব খারাপ ভাবে পুড়ে আছে, এই যা খুঁত।
সবাই হা করে পুতুলটা দেখছিল, একটা ছেলে তাদের নিরবতা ভাঙল, কি সুন্দর দেখেছ?
অন্যরা সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল, কারও পুতুলটাকি সুন্দর বলতে আপত্তি নাই। আরেকজন বলল, মনে হচ্ছে পুতুল না, একেবারে জ্যান্ত।
মেয়েদের একজন বলল, বারবি পুতুলও এত সুন্দর হয় না।
কিন্তু কিসের পুতুল এটা?
এই প্রশ্ন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হলো না, মোটাসোটা যে ছেলেটা ছিল সে দুম করে বলে দিল, বেন টেন, বেন টেন!
বেন টেন?
ছেলেটা একটু গম্ভীর মুখে জবাব দিল, হু। বেন টেনে একটা এলিয়েন আছে না, ফোর আর্মস? চারটে হাত, লাল রঙ? আমি প্রতিদিন দেখি, এটা নিশ্চয়ই ফোর আর্মসের পুতুল।
সবাই আবার মাথা ঝাকাল, ছেলেটা খারাপ বলে নাই। আসলেও ফোর আর্মসের মতই দেখতে। তাদের একজন বলল, কিন্তু এটা আসল কোথা থেকে?
মোটাসোটা বাচ্চাটা স্কুলের পাশের বড় ফ্ল্যাটটা দেখিয়ে বুদ্ধিমান গলায় উত্তর দিল, ওখান থেকে ছুড়ে মেরেছে আর কি।
এত সুন্দর পুতুলটা ফেলে দিবে এভাবে?
আরে দেখছ না পুড়ে গেছে, সেজন্যেই তো ফেলে দিয়েছে। এটাও বুঝ না?
সব কিছু ঠিকঠাক বুঝাই যাচ্ছিল, কিন্তু সব জায়গাতেই কেউ না কেউ থাকে যার কাজই হল ঘাপলা লাগানো। কোথায় চশমা পরা মেয়েটা এতক্ষন সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, একটা ঝামেলা তাকে লাগাতেই হল, আমার কি মনে হয় জান?
সবাই গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
কি?
মেয়েটা তার চশমাটা নাকের উপর তুলল, এরপর ফিসফিস করে জবাব দিল,
এটা সত্যিকারের এলিয়েন!
বাকিরা প্রায় চেচিয়ে উঠল,
সত্যিকারের এলিয়েন?
হ্যা, এজন্যেই এত জ্যান্ত লাগছে।
কিন্তু এখানে এল কেমন করে?
আমার মনে হয় এলিয়েনটা পৃথিবী ভ্রমনে এসেছিল। কিন্তু কালকে রাতের ঝড়ে ওর স্পেসশিপটা কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিল। তাই এলিয়েনটার স্পেসশিপটা ধ্বংস হয়ে গেছে, আর এলিয়েনটা এখানে এসে পড়ে মরে গেছে। দেখ না, স্পেসশিপে আগুন লেগে গিয়েছিল বলেই তো বেচারার শরীর পুড়ে গেছে?
বাচ্চারা নিজেরা একটু আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করল এই ব্যাখ্যাটা গ্রহন করা যায় কি না। কিন্তু সত্যিই কাওকে সন্তুষ্ট বলে মনে হলো না। একটা মেয়ে আবার প্রশ্ন করল,
আচ্ছা, এই এলিয়েনটা কোথা থেকে এসেছে?
চশমা পরা মেয়েটা ঝট করে জবাব দিল,
এন্ড্রোমিডা!
এটা আবার কি?
আমাদের গ্যালাক্সির মত একটা গ্যালাক্সি, কিন্তু অনেক দূরে। নিশ্চয়ই ওখান থেকেই এসেছে।
সবাই একসাথে মাথা চুলকাতে শুরু করল, মেয়েটা বলে কি? আসলেই কি এটা সত্যিকারের এলিয়েন হতে পারে?
আরে ধূর! মোটাসোটা ছেলেটা শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল, যত্তোসব বাজে কথা।
আবার সবাই মাথা নাড়ল, কি বোকা তারা এসব শুনে বিশ্বাস করে ফেলেছিল! একজন হাসতে হাসতে বলল,
দেখাই যাচ্ছে পুতুল, এলিয়েন এত ছোট হয়?
আরেকজন মন্তব্য করল, বেশি গল্পের বই পড়ে পড়ে সাদিয়ার মাথাটা গেছে, তাই এমন উল্টাপাল্টা বলছে।
চশমা পরা মেয়েটা, যার নাম কি না সাদিয়া, সেও আর কোন প্রতিবাদ করল না। পুতুলটাকে পড়ে থাকতে দিয়ে বাচ্চারা আবার খেলায় ফিরে গেল। সাদিয়ার মাথায় আসলেও সমস্যা আছে, কি অদ্ভুত কল্পনা করে ফেলল! এমন কখনো হয়? অসম্ভব!
.
.
.
.
.
.
_________________________

পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বেশ অনেকটা উপরে এন্ড্রোমিডা থেকে আগত মহাকাশযানটা ভেসে আছে। তারা পৃথিবী ভ্রমনে এসেছিল, কিন্তু গতকালের ঝড়ে তাদের একটা স্পেসশিপ চালক সহ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের যে সাথী মারা গেছে তার মৃতদেহও উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। তার স্মৃতিতেই আজ ওখানে শোকসভা আয়োজন করা হয়েছে।


মৃন্ময়

নিজের বিষয়ে কথা বলতে আমার অস্বস্তি লাগে। তাই আমি নিজের বিষয়ে কিছু বলব না।