রুকাশটু মিকাশটু
যে মানুষটি আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন
তার মুখে খোঁচাখোঁচাদাড়ি। একটা জবড়জং চেক শার্ট পরনে। লোকটা হাসি হাসি মুখে
বলল, “এইটা হইলো রুকাশটু মিকাশটু।“
এখন আপনারাই চিন্তা করুন
আমার অবস্থা। এসেছিলাম গ্রামেকয়েকদিন বেড়াতে, আশা ছিল শান্তিতে কিছুদিন
কাটিয়ে যাব। এর মাঝে কেমন করে যেন ফাঁসহয়ে গেল আমি পত্রিকার অফিসে বড় পদের
কাজ করি। সে থেকে প্রতিদিন গ্রামের এক লোক আমারচাচার বাড়িতে এসে বসে থাকে
সাথে দেখা করার জন্য। কত আর সহ্য করা যায়? শেষ পর্যন্তআজকে লোকটাকে সামনে
নিয়েই বসে গেলাম, আপদ যত তাড়াতাড়ি দূর করা যায় তত ভাল।
কিন্তু
আপদেরও একটা পরিমাপ থাকা দরকার। যেমন ধরা যাকমাইক্রো আপদ, মিলি আপদ, সেন্টি
আপদ। এই লোক এক লাফে একেবারে কিলো আপদে পৌঁছে যাবেবলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এত সুন্দর বিকেল, সূর্যের আলো মেঘের সাথে মিশে গিয়ে আকাশেএকটা ছোটোখাটো
সোনালী পর্বতের সৃষ্টি করেছে। ঝিরি ঝিরি হাওয়া বইছে, তাতে গাছেরপাতা
দুলছে। আমি দেখতে পাচ্ছি ঐ যে দূরে ছোট ছোট বাচ্চারা মাঠে দৌড়াদৌড়ি করেখেলছে। আহা, কি স্বর্গ!
দুলছে। আমি দেখতে পাচ্ছি ঐ যে দূরে ছোট ছোট বাচ্চারা মাঠে দৌড়াদৌড়ি করেখেলছে। আহা, কি স্বর্গ!
কিন্তু স্বর্গেও সাপ-খোপ কি যেন থাকে না? আমার
সামনে বসামানুষটিই সেই সাপ বলে আমার ধারনা। নয়তো কি আমার আজ মাঠে মাঠে না
ঘুরে প্লাস্টিকেরচেয়ারে বসে এক অচেনা অজানা মানুষের হাতে ধরা একটা সাদা
ডিমের দিকে তাকিয়ে থাকতেহয়?
ডিমটার দিকে আঙ্গুল তুলে আমি আবার বললাম, “কি বললেন?”
লোকটা নিজের মুখের হাসিটা আরও বড় করল, আমার ধারনা আরেকটুবড় করলে ওর বত্রিশটা দাঁত আমি দেখতে পারব, “এইটা রুকাশটুমিকাশটু।“
“রুকাশটু মিকাশটু? আমি তো দেখছি এটা একটা ডিম!”
“আপনি ঠিকই ধরছেন স্যার। এইটা রুকাশটু মিকাশটুর ডিম।“
লোকটার
কথা শুনে মনে হচ্ছে রুকাশটু মিকাশটু কোন প্রাণীরনাম। সম্ভবত কোন পাখি,
যেহেতু ডিম দেয়। যদিও বাপের জন্মেও আমি এমন আজব প্রাণীর নামশুনিনি,
“রুকাশটু মিকাশটু কি পাখি?”
“জি না পাখি না।“
আমি আবার
ডিমটা দেখলাম। না, মুরগীর ডিম না। তবে ডিমটাকোন কিছুর মতই না। ডিম থাকবে
ডিমের মত, এই ডিমটা কমলালেবুর মত। কচ্ছপের ডিম নাকি?এই অঞ্চলে মানুষ কি
কচ্ছপকে রুকাশটু মিকাশটু ডাকে? এটা তো জানতাম না আগে। এবার আমিকিছুটা
কৌতূহলী হয়ে উঠলাম বলতেই হবে, বাংলাদেশের যত রকম আঞ্চলিক শব্দ আছে
তাদেরমাঝে নিঃসন্দেহে রুকাশটু মিকাশটুই সবচেয়ে আজব। তখনই ঠিক করে ফেললাম
আমি ঢাকা পৌঁছেইবাংলা অ্যাকাডেমির সাথে যোগাযোগ করব। আবার জিজ্ঞেস করলাম,
“রুকাশটু মিকাশটু কি কচ্ছপ জাতীয় কোন প্রাণী?”
লোকটা মাথা নাড়ল, “উহু, উহু।রুকাশটু মিকাশটু একেবারে নতুন রকমের প্রাণী স্যার। এক্কেবারে নতুন। আগে এরকমপ্রাণী কোথাও ছিল না।“
“আপনি ভাই কে এটা একটু বলেন তো।“
আমি যা আশা করেছিলাম তেমন উত্তর পেলাম না, “জি স্যার আমার নাম কলিমুল্লাহ পাঠান। আমি একজন প্রাইভেটটিচার।“
প্রাইভেট টিচার মানে প্রাইভেট পড়ায়।কিছুদিন আগেই পত্রিকাতে প্রাইভেট
পড়ানোর কুফল নিয়ে বড় সাইজের একটা সম্পাদকীয়লিখেছিলাম, বেশ কঠিন কঠিন ভাষা
ছিল সেটাতে। ফল হয়েছিল খুব খারাপ, আমার মেয়েরপ্রাইভেট টিউটর আমাদের বাড়িতে
আসাই বন্ধ করে দিয়েছিল। আসা বন্ধ করার আগে আমাকেআঙ্গুল তুলে বলেও গিয়েছিল,
“কাদের সাহেব,মানুষের পেশাকে অপমান করার কোন অধিকার আপনার নাই। পারলে আমিও
আমার ছাত্রদের শেখাতেপারি সাংবাদিকরা কত বড় দুই নম্বর। কিন্তু আমি তা করব
না, কারণ আমরা আপনাদের মত না।“ সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা চলছিল তখন,
মেয়েটা অঙ্কেএকশতে পেয়েছিল সাতাত্তর! সেই ঘটনার পর থেকে প্রাইভেট টিচারদের
আমি ঘাটাই না।
তাছাড়া কলিমুল্লাহ পাঠানের মাঝে একটা
সাপসাপ ভাব আছে আগেই বলেছি। এই লোকের সাথে বেশি তর্কে না জড়ানোই মঙ্গল, “তা
কলিমুল্লাহ ভাই, আপনি যদি আমাকে ঠিকমত ব্যাখ্যা করেনা বলেন রুকাশটু
মিকাশটু কি জিনিস তাহলে আমি আপনার কথা কেমন করে বুঝতে পারব? একটুযদি
এক্সপ্লেইন করেন....”
কলিমুল্লাহ পাঠান আমার কথা শুনে
পিঠটানটান করে সোজা হয়ে বসলেন, মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কথা শুরু করতে যাচ্ছেন,
“প্রজাতি কাকে বলে জানেন?”
আমি বললাম, “ওই যে গাছ-পালা-জন্তু-জানোয়ারের প্রজাতি? জানি।“
“কি জানেন?”
আশ্চর্য! লোকটা কি আমাকে প্রাইভেট পড়াতেএসেছে নাকি? যেন আমাকে যা জিজ্ঞেস
করছে তারই উত্তর দিতে হবে? তবে এখন পর্যন্ত আমিনিজেকে শান্ত রাখলাম। তাছাড়া
প্রজাতির সংজ্ঞাটাও আমার মুটামুটি জানা আছে, “প্রজাতি হল বলতে পারেন কোন
এক প্রকারের প্রাণী যারানিজেদের মধ্যে ছাড়া অন্যদের সাথে প্রজনন করতে পারে
না। “
লোকটা আমার সংজ্ঞাটা শুনে কান চুলকাতেচুলকাতে বলল,
“আপনার সংজ্ঞাপুরাপুরি হয় নাই, তবে আপাতত চলবে............এখন বলেন,
প্রজাতির যে বৈজ্ঞানিক নামদেওয়া হয় এইটা জানেন?”
“জানি। যেমনমানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স।“
“ঠিকই বলেছেন।আসলে এসবের উপর একটু ধারনা রাখতে হয়, প্রাইভেট-টাইভেট পড়াই তো.............”
আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, “ভাই, আপনি তো রুকাশটু মিকাশটুর কথা বলছিলেন। এর
মাঝে এসবউঠছে কেন? তাড়াতাড়ি বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমার আবার চেয়ারম্যান
সাহেবের বাড়িতেচায়ের দাওয়াত আছে।“
কলিমুল্লাহ নামের
লোকটা তাড়াতাড়ি বলল, “না না ঠিক আছে ঠিক আছে। আমার কাহিনী শুরু করছি।
কিন্তুশুরু করার আগে তো একটা ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার, ঠিক কি না?”
“তা কিছুটাদরকার বটে।“ আমাকে স্বীকার করতেই হল।
তার মুখের হাসি আরও প্রসারিত হল, বত্রিশটাদাঁত দেখার জন্য আর বেশি অপেক্ষা
করতে হবে না, “এই যে আপনিবুঝছেন। অবশ্য আপনি তো বুঝবেনই, কত বড়
সাংবাদিক.........ঠিক আছে। আমি আমার কথায়আসি। আমাদের চারপাশে কত কত
প্রজাতির প্রাণী আছে, ঠিক কি না? তাদের মইধ্যেঅনেকগুলাই আমাদের চেনা।
কিন্তু তার মানে তো এই না সবগুলাই আমরা চিনি। এই ধরেনআজকেই যে নতুন এক
প্রজাতির পাখি আবিষ্কার হয়ে যাবে না কিংবা নতুন এক প্রজাতির মাছআবিষ্কার
হয়ে যাবে না তা কি আপনি আমি বলতে পারি?”
আমি মনে মনে বললাম, “হু, আজকেই নতুন এক প্রজাতির সাপ আমি আবিষ্কার করে ফেলেছি“ কিন্তু মুখে বললাম, “অবশ্যই অবশ্যই!”
কলিমুল্লাহ খুশি হয়েছেন বুঝা গেল, “এখন ধরুন, আমাদের চোখের সামনেই হয়তো
এমন কোন প্রাণী আছেযাদের আমরা চিনতেই পারি না। হয়তো তারা প্রায় বিলুপ্ত,
তাই বেশি একটা দেখাও যায় না।কিন্তু তবুও সচরাচর দেখলে আমরা ওদের চিনতে
পারমু না। ঠিক কি না?”
এই পর্যায়ে আমাকে স্বীকার করতেই
হলপ্রাইভেট টিচার হলেও কলিমুল্লাহ সাহেবের জ্ঞান-গম্মি নেহায়েত কম নয়।
বললাম, “আপনি ঠিকই বলেছেন।“
কলিমুল্লাহ আবার শুরু করলেন,
“এমন চিন্তা আমার মাথায় মাঝে মাঝেই আসে, হয়তো আমাদের আশেপাশেই এমন একটা
অজানা প্রজাতির বাস, কিন্তু আমরা বুঝতেই পারি না। তাই নতুন কিছুদেখলে চোখ
রাখতাম, যদি একটা প্রজাতি আবিষ্কার করে ফেলতে পারি তেইলে আমার নাম ছড়াবেনা?
আমাদের দেশের নাম ছড়াবে না?”
“অবশ্যইছড়াবে........তারপর?”
“এখন আসল কথাশুরু করি। আমাদের এখানে নতুন রাস্তা বসাবার কথা। পুলাপাইনের
খেলার মাঠের পাশে তাইবড় বড় পাথর এনে জমা করা হয়েছে। আমার একটা পুলা আছে, বড়
ত্যাঁদড়। বুঝছেন, বড় রকমের ত্যাঁদড়।সে করছে কি, দুইটা বড় বড় পাথর আইনা
আমাদের বাসার উঠানে রেখে দিছে। আপনিই বলেন, শুধুশুধুএত বড় দুইটা পাথর বয়ে
আনার কোন দরকার ছিল?”
আমি বললাম, “কোন দরকার নেই।“
কলিমুল্লাহ পাঠান হাসলেন, “তাহলেই বুঝেন.......যাই হোক, এখন তো আর এই পাথর
ফিরাইয়াদেওয়ার দরকার পড়ে না। পাথর দুইটা যেখানে থাকত সেখানেই রইয়া গেল,
বৃষ্টিতে ভিজল,রোদে পুড়ল, কিন্তু নড়ে টড়ে না। অবশ্য পাথর তো, নড়ার কথাও
না।“
এতটুকুন বরে কলিমুল্লাহ সাহেব দম নিলেন।আমি জিজ্ঞেস করলাম, “পানি খাবেন?”
কলিমুল্লাহ সাহেব বললেন, “হ্যাঁ।“ আমি ঘরেরভিতরে হাঁক দিয়ে পানি দিয়ে যেতে
বললাম। কলিমুল্লাহ সাহেব আবার শুরু করলেন, “তারপর একদিন আমি উঠানে বসে
আছি, তখন দেখতে পেলাম পাথরদুইটা কিছুটা সরে গেছে ওদের নিজের জায়গা থেইকা।
পাথর তো আর এমনি এমনি সরে না,কিন্তু সরাবেই বা কে? আপনিই বলেন। প্রথম প্রথম
আমি বিষয়টার দিকে নজর দিলাম না,কিন্তু পরের দিন মনে হইলো পাথর দুইটা আরও
একটু সরে গেছে। শুধু সরেই যায় নাই, একটা পাথরআরেকটার দিকে যাচ্ছে।“
এই সময় পানি চলে এলো। কলিমুল্লাহ সাহেবঢকঢক করে গ্লাসটা খালি করলেন। আমি
আগ্রহ ভরা চোখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি, তিনিমনে হয় খুশিই হয়েছেন, “বিষয়টা
আমাকেঅবাক করল। আমি পাথরটা ধরতে গিয়ে চমকে গেলাম। ধইরা মনে হইলো জ্যান্ত
জিনিস! বুঝছেন,জ্যান্ত! পাথর থাকবো ঠাণ্ডা, ওই গুলাও ছিল ঠাণ্ডা, কিন্তু
এতটাও না। তখন আমার মনেচিন্তাটা আসল। আইচ্ছা, এগুলাও যদি নতুন কোন রকমের
প্রাণী হয়? কোন নতুন রকমেরপ্রজাতি।“
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কি বললেন?” পাথর কখনওপ্রাণী হতে পারে না। যদি সত্যিই হতো, তবে ওটা এই
যুগের সবচেয়ে যুগান্তকারীআবিষ্কার হয়ে যেত বলে আমার ধারনা। শ্রেণীবিন্যাস
নতুন করে লিখতে হতো। কারও তা কেবলনতুন একটা প্রজাতির আবিষ্কার নয়, অনেকগুণ
বড় আবিষ্কারে রূপ নিত। কিন্তু পুরো ঘটনাটাইতো হাস্যকর, আপনারাই বলুন আমি
ঠিক কি না? তখনই আমার ধারনা জন্মাল লোকটার মাথায়কিছু ছিট আছে।
কলিমুল্লাহ সাহেব কিন্তু বলতেই লাগলেন, “তখন আমি একটা কাজ করলাম। কেন
করলাম নিজেও জানি না এমনএকটা অদ্ভুত কাজ, কিন্তু করলাম। পাথর দুইটা তুলে
নিয়া একটা গাছের নিচে একসাথে রেখেদিলাম। তারপর অনেকদিন চলে গেল, আমার আর
পাথরগুলার কথা মনে নাই। এই তো দুই সপ্তাহআগে হঠাৎ কেমন করে যেন মনে পড়ে
গেল, দেখতে গেলাম। গিয়ে কি দেখি জানেন?”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি?” যদিও উত্তরটাআমি তখনই অনুমান করতে পারছি।
লোকটা বলল, “দেখলাম পাথর দুটোর নিচে একটা ডিম। এই ডিম।“
“তাতে আপনি ধরেনিলেন এটা পাথর দুটোর ডিম?”
“ধরে নিব না?এছাড়া এমন জায়গায় ডিম আসবে কেমন করে বলেন? তারমানে আপনি বুঝতে
পারছেন আমি কত বড়জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছি? একেবারে নতুন একটা প্রাণী,
নতুন একটা প্রজাতি! সবপ্রজাতির একটা বৈজ্ঞানিক নাম থাকে, আমিও আমার
প্রজাতির একটা বৈজ্ঞানিক নাম ঠিককরছি। রুকাশটু মিকাশটু।“
আমি ততক্ষণে বুঝে গেছি যে লোকটা আধা-পাগল,হয়তো তারও বেশি হতে পারে। কিসে
না কিসে জায়গা পেয়ে ডিম দিয়েছে, লোকটা মনে করছেন পাথরদুটোর ডিম। একটা পাথর
আসলে পাথর না, জলজ্যান্ত একটা প্রাণী, এটাই তো ভয়ানক রকমেরহাস্যকর কথা। তার
উপর কলিমুল্লাহ পাঠান বলছেন, সেটা আবার ডিমও দেয়!
আমি একটু কেশে বললাম, “আপনার কথা তো শুনলাম, এখন বলুন আমি কি করতে পারি এব্যাপারে?”
“অবশ্যই আপনিকরতে পারেন স্যার! এত বড় একটা আবিষ্কার, সেটা কেউ জানবে না?
আপনি এত বড় মানুষ, কতরকম লোকের সাথে পরিচয়, আপনি নিশ্চয়ই কিছু করতে পারবেন।
এই জন্যই বড় আশা নিয়ে আপনারকাছে আসা।“
সন্ধ্যা প্রায়
হয়ে এসেছে ততক্ষণে।চেয়ারম্যানের বাড়িতে চা খেয়ে আসা উচিৎ। পরশু চলে যাব, আর
সময় পাওয়া যাবে না, “ঠিক আছে কলিমুল্লাহ সাহেব। আমি দেখব কি করতে পারি।
এখনযে উঠতে হয়............”
সেদিনের মত কলিমুল্লাহ পাঠান
উঠে গেলেন।যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন আবার তার দেখা পেলাম। বাসে বসে আছি,
এসময় তিনি হাজির, “স্যার স্যার!”
আমি তাকে দেখে একটু বিরক্ত হলাম। এখন নাজানি নতুন কি হাজির করে। হয়তো বলবে ডিম ফেটে বাচ্চা বের হয়ে গেছে, “কিছু বলবেন?”
তিনি আমার হাতে একটা ছোট বাক্স দিয়েবললেন, “এইখানে আমার ডিমটা দিয়া দিছি।
ঢাকায়আপনি বড় বড় মানুষের সাথে কথা বলবেন, তারা পরীক্ষা করার জন্য কিছু একটা
চাইতে পারে।এই জন্যই দিয়া দিলাম।“
আমি বিরক্তি ভরে
প্যাকেটটা ব্যাগে ভরলাম।যত্তোসব উটকো ঝামেলা এসে হাজির হয়। কলিমুল্লাহ
সাহেবকে বিদায় জানাতে গিয়ে লক্ষ্যকরলাম তার মুখ একটু কালো, “ কি
হয়েছেকলিমুল্লাহ সাহেব?”
তিনি বিষাদপূর্ণ মুখে বললেন,
“কালকে সকালে গিয়া দেখি রুকাশটু মিকাশটু দুইটা নাই, কেযেন ওইগুলা নিয়া
গেছে। বড়ই কষ্ট হইতাছে ওইগুলার জন্য।“
মানুষ বড় বিচিত্র
প্রাণী। বোমা মেরেলাখ-লাখ মানুষকে খুন করতে মানুষের কোন কষ্ট হয় না। আবার
সেই মানুষের বুকেই থাকেঅবুঝ প্রাণীর জন্য অসীম মমতা। কখনও কখনও জড় প্রস্তর
খণ্ডের জন্যেও, যাদের মানুষজ্যান্ত বলে মনে করে। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম,
“চিন্তা করবেননা, সব ঠিক হয়ে যাবে।“
*********************************************************************************
তারপর একমাস চলে গেছে। আমি অফিস থেকেবাসায় ঢুকেছি মাত্র, তখনই আমার স্ত্রী
এসে বলল, “তোমার কি মাথামুণ্ডুসব ঠিক আছে? কি সব জিনিস নিয়ে ঘুর তুমি?”
আমি জুতো খুলতে খুলতে বললাম, “কেন, কি হয়েছে?”
“ওই যে সেবার যেগ্রামে ঘুরতে গেলে, আসার পর ব্যাগের জিনিসপত্র নিজেই
গুছোলে। আজকে আমি ব্যাগটা বেরকরতে গিয়ে দেখি ভিতরে একটা বাক্স। বাক্সের
ভিতর ডিমের খোসা আর একটা পাথর। তুমিডিমের খোসা আর পাথর দিয়ে কি কর?”
সোফায় বসতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ভয়ানক শকখাওয়ার অবস্থা হল আমার, যেন মাথার
চুল সব খাড়া হয়ে যাবে, “কি বললে তুমি? কি বললে ছিল সেই বাক্সে?”
“ডিমের খোসা আরপাথর।“
আমি ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় এখন সেই পাথর?”
“কোথায় আবার কি?ফেলে দিয়েছি। তোমার ধারনা আমি ঘরে পাথর জমাই?”
“কোথায় আবার কি?ফেলে দিয়েছি। তোমার ধারনা আমি ঘরে পাথর জমাই?”
ততক্ষণে আমার আশা ভরসা সবকিছু ধূলিসাৎ হয়েগেছে। ধপ করে সোফায় বসে পড়লাম, মুখে হতাশা, “ডিম ফুটে গেছে!”
আমার স্ত্রী অবাক হল, “কি বললে তুমি?”
এরপরের অনেকটা সময় আমি কিছুই বললাম নাকাউকে। শুধু কয়েকবার মুখ থেকে বের হল, “রুকাশটু মিকাশটু!”